নবীজির মসজিদ ﷺ (মসজিদ নিভাবী)
Al Haram, Madinah 42311
ভূমিকা
**মসজিদে নববী** — আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ ﷺ-এর মসজিদ — পৃথিবীর অন্যতম পবিত্র স্থান এবং মদিনা মুনাওয়ারার প্রাণকেন্দ্র। মক্কার পর, লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী আধ্যাত্মিক প্রশান্তি অনুভব করতে, হজ বা উমরাহর পর বিশ্রাম নিতে এবং আল্লাহর সাথে তাদের সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে এখানেই ছুটে আসেন।
এই মসজিদ পরিদর্শন করা কেবল একটি ধর্মীয় ঘটনা নয়, এটি একটি অনন্য অভিজ্ঞতা যা আত্মাকে শান্তি, বিনয় এবং কৃতজ্ঞতায় পূর্ণ করে তোলে। এখানে প্রতিটি পদক্ষেপ রাসূল ﷺ-এর মহৎ মিশনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং প্রতিটি নামায সর্বশক্তিমানের রহমতের কাছাকাছি আসার সুযোগ দেয়।
মসজিদে নববী, ইসলামে মক্কার আল-মসজিদ আল-হারামের পরে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থান। রাসূল ﷺ বলেছেন:
(সহীহ আল-বুখারী, হাদীস নং ১১৯০)
আমার এই মসজিদে একটি নামায, আল-মসজিদ আল-হারাম ছাড়া অন্য যে কোনো মসজিদে এক হাজার নামাযের চেয়ে উত্তম
মসজিদে নববীর ইতিহাস ও তাৎপর্য
রাসূল ﷺ-এর মসজিদটি ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মক্কা থেকে মদিনায় তাঁর **হিজরতের** পরপরই নির্মিত হয়েছিল। প্রথম পাথরগুলো স্বয়ং রাসূল ﷺ এবং তাঁর সাহাবীগণ স্থাপন করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে, ভবনটি খুব সাধারণ ছিল — কাঁচা ইটের দেয়াল, খেজুর পাতার ছাদ এবং মাটির মেঝে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে, মসজিদটি বৃদ্ধি পেতে থাকে, যতক্ষণ না এটি বিশ্বের অন্যতম মহৎ ইসলামী কমপ্লেক্সে পরিণত হয়।
এখানেই রাসূলুল্লাহ মুহাম্মদ ﷺ-এর মুবারক কবর এবং তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ সাহাবী — **আবু বকর** (রাঃ) এবং **উমর ইবন আল-খাত্তাব** (রাঃ)-এর কবর রয়েছে। মসজিদের এই অংশটিকে **“রাওযা শরীফাহ”** বা **“জান্নাতের বাগান”** বলা হয়, যার সম্পর্কে রাসূল ﷺ বলেছেন:
(সহীহ আল-বুখারী, হাদীস নং ১১৯৬)
আমার ঘর এবং আমার মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থানটি জান্নাতের বাগানসমূহের একটি বাগান
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, মসজিদটি ইসলামী জ্ঞান, ঈমান এবং ভ্রাতৃত্বের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। আজ, মসজিদে নববী কেবল নামাযের স্থান নয়, এটি ইসলামী ঐতিহ্য, শান্তি এবং আতিথেয়তার প্রতীকও। মসজিদের অভ্যন্তরীণ সজ্জা আধুনিক স্থাপত্য এবং প্রাচীন আধ্যাত্মিক পরিবেশের মিশ্রণ ঘটিয়েছে: মার্বেল কলাম, সোনালী অলঙ্কার, নরম কার্পেট এবং সূক্ষ্ম আলো একটি মহিমা ও শ্রদ্ধার অনুভূতি তৈরি করে।
মসজিদে নববীর প্রধান অংশসমূহ এবং তাদের আধ্যাত্মিক গুরুত্ব
১. রাওযা শরীফাহ (রিয়াদ উল-জান্নাহ — জান্নাতের বাগান)
রাওযা হলো রাসূল ﷺ-এর কবর এবং তাঁর মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থান। এই এলাকাটি পৃথিবীর সবচেয়ে বরকতময় স্থানগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত। রাসূল ﷺ বলেছেন যে এই কোণটি জান্নাতের একটি অংশ, এবং এখানে আদায়কৃত নামাযের বিশেষ পুরস্কার রয়েছে।
রাওযার বৈশিষ্ট্য:
- সবুজ কার্পেট দিয়ে ঢাকা থাকে
- সোনালী বেড়া দিয়ে ঘেরা থাকে
- প্রবেশ নির্ধারিত সময়সূচী অনুযায়ী এবং একটি বিশেষ সারির মাধ্যমে হয়
রাওযায় নামায পড়া প্রতিটি তীর্থযাত্রীর স্বপ্ন। এখানে দুই রাকাত নফল নামায পড়া এবং আন্তরিকভাবে দোয়া করা বাঞ্ছনীয়।
২. রাসূলুল্লাহ মুহাম্মদ ﷺ-এর কবর মোবারক
রাওযার সামনে পবিত্র কক্ষটি রয়েছে যেখানে রাসূল ﷺ শায়িত আছেন, এবং তাঁর পাশে তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ সাহাবী আছেন:
- আবু বকর আস-সিদ্দিক (রাঃ)
- উমর ইবন আল-খাত্তাব (রাঃ)
তীর্থযাত্রীরা সম্মানের সাথে রাসূল ﷺ-কে **সালাম** জানানোর জন্য এই এলাকার কাছে আসেন। এটি পার্থিব বিষয়ের জন্য দোয়া করার স্থান নয়, বরং আল্লাহর রাসূলের প্রতি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের স্থান।
এইভাবে বলা বাঞ্ছনীয়: "আসসালামু আলাইকা, ইয়া রাসূলুল্লাহ", "আসসালামু আলাইকা, ইয়া আবা বকর", "আসসালামু আলাইকা, ইয়া উমর"
৩. রাসূল ﷺ-এর মিম্বর
মিম্বর হলো সেই স্থান যেখান থেকে রাসূল ﷺ মুসলমানদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতেন, দিকনির্দেশনা দিতেন এবং জুমার খুতবা প্রদান করতেন। আজ এটি সোনালী উপাদান দ্বারা সজ্জিত, এবং তীর্থযাত্রীরা প্রায়শই এটিকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে দেখেন।
৪. সবুজ গম্বুজ
সবুজ গম্বুজ মসজিদে নববীর প্রতীক। রাসূল ﷺ-এর কবর ঠিক এর নিচেই অবস্থিত। গম্বুজটি দূর থেকে পরিষ্কার দেখা যায় এবং এটি একটি স্থাপত্য নির্দেশক।
৫. নামাযের হল এবং আধুনিক সম্প্রসারণ
আধুনিক মসজিদের অন্তর্ভুক্ত:
- কার্পেট এবং এয়ার কন্ডিশনার সহ বিশাল অভ্যন্তরীণ হল
- মসজিদের উঠানে ছায়া তৈরির জন্য খোলা-বন্ধ হওয়া ছাতা
- গ্রীষ্মকালের জন্য বায়ু শীতলীকরণ ব্যবস্থা সহ এলাকা
- স্বয়ংক্রিয় শব্দ ও আলো ব্যবস্থা
৬. মহিলাদের জন্য এলাকা
মহিলাদের জন্য বিশেষ এলাকা বরাদ্দ করা হয়েছে:
- আলাদা প্রবেশপথ সহ
- রাওযা পরিদর্শনের জন্য আলাদা সময়সূচী সহ
- সম্পূর্ণ আরাম এবং নিরাপত্তার সাথে
মহিলারাও রাওযা পরিদর্শন করতে পারেন, তবে শুধুমাত্র তাদের নিজস্ব সময়সূচী অনুযায়ী, যা প্রতিদিন আপডেট করা হয়।
৭. বাইরের আঙ্গিনা এবং ছায়া-ছাতা
মসজিদের আঙ্গিনা দৈত্যাকার ছাতা দিয়ে ঢাকা থাকে, যা সূর্যের তাপে খুলে যায়। তারা তীর্থযাত্রীদের রক্ষা করে এবং খোলা জায়গায় নামাযের জন্য আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করে।
৮. মসজিদে নববীর লাইব্রেরি
মসজিদ প্রাঙ্গণে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ইসলামী লাইব্রেরি পরিচালিত হয়। এখানে পাণ্ডুলিপি, হাদীসের বই, তাফসীর, ফিকহ এবং ঐতিহাসিক নথি সংরক্ষিত আছে।
এটি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ: প্রতিটি অংশের কেবল স্থাপত্য মূল্য নেই, বরং একটি আধ্যাত্মিক গভীরতাও রয়েছে। মসজিদ পরিদর্শন তীর্থযাত্রীকে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব উপলব্ধি করতে এবং রাসূল ﷺ-এর সুন্নাহ ও জীবনের সাথে সংযোগ অনুভব করতে সাহায্য করে।
রাওযায় প্রবেশ করবেন কীভাবে (রিয়াদ উল-জান্নাহ)
“জান্নাতের বাগানসমূহের একটি বাগান” নামে পরিচিত রাওযা শরীফাহ, মসজিদে নববীর ভিতরে একটি পবিত্র এলাকা, যেখানে নামাযের পুরস্কার বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। রাওযায় প্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়, বিশেষ করে উমরাহ ও হজের মৌসুমে।
১. সাধারণ পরিদর্শনের নিয়ম
প্রবেশ শুধুমাত্র অনুমতি নিয়ে, **নুসুক** (তাওয়াক্কালনা সেবা) সিস্টেমের মাধ্যমে করা হয় — তীর্থযাত্রীকে পরিদর্শনের সময়টি আগে থেকে বুক করতে হবে।
- নিয়ন্ত্রণ মসজিদ কর্মীরা দ্বারা পরিচালিত হয়।
- প্রবেশ কঠোরভাবে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী হয়।
- আগে থেকে আসা (৩০-৪০ মিনিট পূর্বে) এবং লাইনে দাঁড়ানো প্রয়োজন।
২. রাওযা পরিদর্শনের সময়সূচী
পুরুষদের জন্য:
পরিদর্শন ফজরের নামাযের পরপরই শুরু হয় এবং ইশার নামায পর্যন্ত চলে। সবচেয়ে শান্ত সময়: ইশার পর থেকে তাহাজ্জুদ পর্যন্ত (রাতে, যখন তীর্থযাত্রী কম থাকে)।
মহিলাদের জন্য:
পরিদর্শন শুধুমাত্র আলাদা সময়ে সম্ভব। সাধারণত তিনটি সময়ের ব্যবধান থাকে: ফজরের পর, যোহরের পর, ইশার পর। প্রবেশ আলাদা মহিলাদের দরজা দিয়ে হয়।
সময় মৌসুম (রমজান, হজ) অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে — প্রতিদিন নুসুক অ্যাপ্লিকেশন বা মসজিদ কর্মীদের মাধ্যমে যাচাই করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
৩. কিভাবে পরিদর্শন বুক করবেন (নুসুক অ্যাপ্লিকেশন)
- নুসুক অ্যাপ্লিকেশন (Tawakkalna Services) ইনস্টল করুন।
- পাসপোর্ট নম্বর বা ইকামার মাধ্যমে লগ ইন করুন।
- নির্বাচন করুন: "Visit Rawdah" → "Madinah"।
- তারিখ ও সময় নির্দিষ্ট করুন।
- QR কোড সহ ইলেকট্রনিক অনুমতি পান। বুকিং ছাড়া প্রবেশ অসম্ভব।
৪. প্রবেশ প্রক্রিয়া
তীর্থযাত্রীদের দলকে একটি করিডর দিয়ে রাওযার দিকে পরিচালিত করা হয়। দুই রাকাত নফল নামায আদায় করতে এবং দোয়া করার জন্য আপনার কাছে ১-৩ মিনিট সময় থাকবে। সময় নষ্ট না করার জন্য আপনার নিয়ত ও দোয়া আগে থেকে প্রস্তুত রাখুন।
৫. সফল পরিদর্শনের জন্য সেরা পরামর্শ
- তাড়াতাড়ি আসুন, লাইনে শান্তভাবে অপেক্ষা করুন।
- নিরাপত্তাকর্মীদের সাথে তর্ক করবেন না।
- নম্র ও বিনয়ী হোন — এটি রাসূল ﷺ-এর সুন্নাহ।
- মহিলাদের তাদের সময়ের ব্যবধানের শুরুতে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়।
যদি আপনি প্রবেশ করতে না পারেন, তবুও দোয়া করা চালিয়ে যান — আল্লাহ আপনার নিয়তকে লিপিবদ্ধ করেন।
রাওযার ভিতরে কী বলবেন
২ রাকাত নফল নামায আদায় করা যেতে পারে, এবং তারপর: ক্ষমার জন্য দোয়া করুন, উমরাহ ও হজের কবুলিয়াতের জন্য চান, পিতামাতা ও পরিবারের জন্য দোয়া করুন, উম্মাহর জন্য দোয়া করুন।
“হে আল্লাহ, আমার জন্য তোমার রহমতের দরজা খুলে দাও এবং এই বরকতময় স্থানে আমার ইবাদত কবুল কর।”
মসজিদে নববীতে আচরণের নিয়ম এবং আধ্যাত্মিক শিষ্টাচার
মসজিদে নববী কেবল একটি মসজিদ নয়, এটি এমন একটি স্থান যেখানে আল্লাহর রাসূল ﷺ শায়িত আছেন। তীর্থযাত্রীকে সুন্নাহর ভিত্তিতে বিশেষ আচরণের নৈতিকতা পালন করতে হবে।
১. নেক নিয়ত নিয়ে মসজিদে প্রবেশ
ইবাদতের নিয়তে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করুন, এই দোয়াটি পড়ে: “হে আল্লাহ, আমার জন্য তোমার রহমতের দরজা খুলে দাও।”
২. নীরবতা ও সম্মান — অপরিহার্য
জোরে কথা বলা, তর্ক করা বা আওয়াজ তোলা নিষিদ্ধ। পবিত্র এলাকায় হাসি, ফোনে কথা বলা, ছবি ও ভিডিও তোলাকে অসম্মানজনক বলে মনে করা হয়। নম্রতা ও বিনয় প্রকাশ করুন।
আল্লাহ বলেছেন:
(আল-কুরআন ৪৯:২)নবীর কণ্ঠস্বরের উপর তোমাদের কণ্ঠস্বর উঁচু করো না
৩. আধ্যাত্মিক মনোযোগ
জিকির (আল্লাহর স্মরণ) এর অবস্থা বজায় রাখুন। রাসূল ﷺ-এর উপর দরূদ ও সালাম পাঠ করুন। পার্থিব বিষয়ে মনোযোগ সরিয়ে নেবেন না।
৪. পোশাক এবং শালীনতা
পোশাক ঢিলেঢালা এবং আবৃত হতে হবে। মহিলাদের পুরো শরীর এবং চুল সম্পূর্ণরূপে আবৃত করা বাধ্যতামূলক। পুরুষদের ছোট বা আঁটসাঁট পোশাক পরিধান করা উচিত নয়।
৫. রাসূল ﷺ-এর কবরের কাছে আচরণ
শ্রদ্ধার সাথে, বাড়াবাড়ি ছাড়া কবরের কাছে যান। সরাসরি রাসূলের কাছে কিছু চাইবেন না — **দোয়া শুধুমাত্র আল্লাহর কাছে করা হয়**। শান্ত ও সম্মানের সাথে সালাম জানান, ধাক্কাধাক্কি করবেন না।
অনুমতি আছে: হৃদয়ে সম্মান জানানো, সালাম দেওয়া এবং চলে যাওয়া। নিষিদ্ধ: দেয়ালে স্পর্শ করা, উচ্চস্বরে কাঁদা, রাসূলের কাছে সাহায্য চাওয়া, ছবি তোলা।
৬. অন্যান্য তীর্থযাত্রীদের প্রতি যত্ন
বয়স্ক, মহিলাদের জন্য জায়গা ছেড়ে দিন। আবর্জনা ফেলবেন না — মসজিদের পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অংশ।
মসজিদে নববী পরিদর্শনের সেরা সময়
১. রমজান — সর্বোচ্চ পুরস্কারের সময়
নামায এবং কুরআন তেলাওয়াতের পুরস্কার বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। বৈশিষ্ট্য: অনেক বেশি তীর্থযাত্রী, হোটেলের উচ্চ মূল্য, তাড়াতাড়ি বুকিং (৪-৬ মাস আগে) প্রয়োজন।
২. হজ মৌসুম (যিলহজ্ব)
বিশ্বাসীদের ব্যাপক প্রবাহ পরিলক্ষিত হয়, আধ্যাত্মিক পথ সমাপ্তির শক্তিশালী অনুভূতি হয়।
৩. সাধারণ মাসগুলো (মুহাররম থেকে শাবান পর্যন্ত) — শান্ত ইবাদতের জন্য সেরা সময়
কম মানুষ, হোটেলগুলো আরও সহজলভ্য। মসজিদে বেশি সময় কাটানো যেতে পারে।
৪. শরৎ ও শীতকাল — সেরা জলবায়ু
নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আবহাওয়া মৃদু থাকে। তীর্থযাত্রা শারীরিকভাবে সহজ হয়।
সারসংক্ষেপ:
যদি লক্ষ্য আধ্যাত্মিক নির্জনতা হয় — সাধারণ মাসগুলো বেছে নিন। যদি লক্ষ্য সর্বোচ্চ পুরস্কার হয় — রমজানে আসুন।
মসজিদে নববীর কাছাকাছি কোথায় থাকবেন: সকল বাজেটের জন্য সেরা এলাকা ও হোটেল
থাকার জন্য সেরা এলাকা
- হারামের ঠিক কাছাকাছি এলাকা (মসজিদের উত্তর/পশ্চিম প্রবেশপথ): প্রিমিয়াম বিকল্প, কয়েক মিনিটের হাঁটার দূরত্বে।
- সেন্ট্রাল মদিনা এলাকা: হাঁটার দূরত্বে। দাম এবং অবস্থানের মধ্যে ভালো সমন্বয়।
- মদিনার উপকণ্ঠ / মসজিদ থেকে ২-৩ কিমি দূরে এলাকা: যারা সঞ্চয় করতে চান তাদের জন্য উপযুক্ত (প্রায়শই শাটল থাকে)।
শ্রেণি অনুযায়ী হোটেলের সুপারিশ
**বিলাসিতা (৫ তারা):** Pullman Zamzam Madina, The Oberoi, Madina। সুবিধা: মসজিদে যেতে ন্যূনতম সময়, সেরা দৃশ্য।
**মাঝারি ও আরামদায়ক স্তর (৪ তারা):** Elaf Al Taqwa Hotel। সুবিধা: আরামদায়ক স্তর, যুক্তিসঙ্গত মূল্য।
**বাজেট হোটেল:** Golden Tulip Al Shakreen এবং অ্যাপার্টমেন্ট হোটেল। সুবিধা: সর্বাধিক অর্থনৈতিক বিকল্প।
ব্যবহারিক পরামর্শ: যদি আপনি কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করতে না চান — তবে মসজিদের দরজার ঠিক পাশে একটি ৫★ হোটেল নিন।
তীর্থযাত্রীদের জন্য ব্যবহারিক টিপস: মসজিদে নববীতে অবস্থানকে আরামদায়ক ও বরকতময় করবেন কীভাবে
যা অবশ্যই সাথে নিতে হবে
- আরামদায়ক জুতো।
- জুতোর জন্য হালকা ব্যাগ বা থলি (জুতো সাথে বহন করতে হবে)।
- পাসপোর্ট / ইকামাহ / রাওযার অনুমতি: নিজের কাছে রাখুন।
খাবার ও পানি
মসজিদে বিনামূল্যে জমজমের পানি সরবরাহ করা হয়। রমজানে এবং ফজরের আগে, মসজিদ ইফতার ও সাহুর আয়োজন করে, যা বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়।
পরামর্শ: ভারী খাবার এবং অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলুন, বিশেষ করে নামাযের আগে — এটি ক্লান্তি ও তন্দ্রা সৃষ্টি করতে পারে।
কীভাবে ক্লান্তি এড়ানো যায় এবং সময়কে কাজে লাগানো যায়
- প্রতিটি নামাযের জন্য আগে আসুন — ৩০-৪০ মিনিট আগে।
- নামাযের পরে জিকিরের জন্য মসজিদে থাকুন — এটি ভিড়ে বাইরে যাওয়ার চেয়ে ভালো।
- খালি সময় কেনাকাটা করার পরিবর্তে কুরআন পড়ার জন্য ব্যবহার করুন।
তীর্থযাত্রীদের সাধারণ ভুল এবং কীভাবে সেগুলি এড়ানো যায়
১. আওয়াজ তোলা এবং পার্থিব বিষয়ে কথা বলা
রাসূল ﷺ-এর মসজিদ ব্যবসা, রাজনীতি বা ঘরোয়া বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জায়গা নয়। সঠিক: শুধুমাত্র প্রয়োজনে আস্তে কথা বলুন এবং মনোযোগ সরিয়ে নেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
২. রাসূল ﷺ-এর কবরের কাছে ছবি ও ভিডিও
এটি অসম্মান এবং আধ্যাত্মিক পরিবেশের লঙ্ঘন। রাসূল ﷺ বলেছেন: “নিশ্চয় কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হল তারা, যারা ইবাদতে লোক দেখানোর জন্য পছন্দ করে।”
৪. মধ্যস্থতাকারী হিসেবে রাসূল ﷺ-এর কাছে কিছু চাওয়া
কিছু তীর্থযাত্রী সরাসরি রাসূল ﷺ-এর কাছে প্রার্থনা করেন, তাঁর কাছে তাদের ইচ্ছা পূরণের জন্য চান। এটি নিষিদ্ধ — দোয়া শুধুমাত্র আল্লাহর কাছেই করা হয়।
অনুমতি আছে: সালাম পাঠানো এবং আল্লাহর কাছে রাসূল ﷺ-এর উপর আরও বরকত বর্ষণের জন্য দোয়া করা।
মসজিদে নববী সম্পর্কে প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
- ১. মসজিদে নববী অন্যান্য মসজিদ থেকে কী কারণে আলাদা?
- এটি রাসূল মুহাম্মদ ﷺ-এর মসজিদ, ইসলামের দ্বিতীয় পবিত্র স্থান। এই মসজিদে একটি নামাযের পুরস্কার এক হাজার গুণ বেশি।
- ৪. রাওযা (রিয়াদ উল-জান্নাহ) পরিদর্শনের অনুমতি কীভাবে পাব?
- **নুসুক** অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে নিবন্ধন করা প্রয়োজন। প্রবেশ শুধুমাত্র QR কোড থাকলে অনুমোদিত।
- ৫. রাসূল ﷺ-এর কবরের কাছে কি নামায পড়া যায়?
- আপনি কবরের সামনে দাঁড়িয়ে সালাম দিতে পারেন। সরাসরি কবরের সামনে নামায পড়া বা রাসূল ﷺ-এর দিকে মুখ করে দোয়া করা নিষিদ্ধ। সমস্ত দোয়া কেবল আল্লাহর কাছেই করতে হবে।
- ৯. রাতে কি মসজিদ পরিদর্শন করা সম্ভব?
- হ্যাঁ। মসজিদে নববী ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। রাতের নামাযের বিশেষ আধ্যাত্মিক গুরুত্ব এবং আরও শান্ত পরিবেশ রয়েছে।
ঠিকানা
Al Haram, Madinah 42311